বাংলাদেশে জাতীয় আয়ের উৎস হিসাবে আমরা অনেকগুলি খাতের নাম উল্লেখ করতে পারি। যেমন: কৃষি ও বনজ, মৎস্য, শিল্প, খনিজ, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সম্পদ, নির্মাণ শিল্প, পাইকারি ও বিপণন, হোটেল-রেস্তোরাঁ, পরিবহন ও যোগাযোগ, ব্যাংক-বিমা, স্বাস্থ্য, সামাজিক ব্যবসা-বাণিজ্য, শুল্ক প্রভৃতি। এর মধ্যে আমাদের জাতীয় উৎপাদন ও আয়ের কয়েকটি খাত নিচে উল্লেখ করা হলো :
ক) কৃষি ও বনজ: খাদ্যশস্য, শাকসবজি ও বনজ সম্পদ এই খাতের অন্তর্ভুক্ত। ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে এই খাতের অবদান ছিল ১৩.০৯ শতাংশ এবং প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১.৪৭ শতাংশ। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে এই খাতের অবদান ছিল ১০.১৫ শতাংশ এবং প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৩.১৫ শতাংশ ।
খ) মৎস্য খাত: ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ নদী ও অন্যান্য জলাশয় এবং সামুদ্রিক উৎস থেকে মাছ আহরণসহ দেশজ উৎপাদনে মৎস্য খাতের অবদান ছিল ৩.৬৮ শতাংশ এবং প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬.১৮ শতাংশ। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে এই খাতের অবদান ছিল ৩.৪৯ শতাংশ এবং প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬.২১ শতাংশ।
গ) শিল্পখাত: ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে জিডিপিতে শিল্পখাতের অবদান ছিল ১৯.০০ শতাংশ এবং প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১০.৩১ শতাংশ। পোশাক শিল্প, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি সরবরাহ, খনিজ সম্পদ ও নির্মাণ শিল্প প্রভৃতিকে এই খাতের অন্তর্ভুক্ত করায় জাতীয় অর্থনীতিতে এই খাতের অবদান অনেক বেড়ে যায় । ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে এই খাতের অবদান ২৪.০৮ শতাংশ এবং প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১৪.২০ শতাংশ ।
ঘ) পাইকারি ও খুচরা বাণিজ্য: ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে জিডিপিতে এই খাতের অবদান ছিল ১৪.০৩ শতাংশ এবং প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬.১৮ শতাংশ। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে এই খাতের অবদান ছিল ১৩.৯২ শতাংশ এবং প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৮.১৪ শতাংশ।
ঙ) পরিবহন, সংরক্ষণ ও যোগাযোগঃ ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে জিডিপিতে এই খাতের অবদান ছিল ১১.৫০ শতাংশ এবং প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬.২৭ শতাংশ। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে এই খাতের অবদান ছিল ১১.০১ শতাংশ এবং প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭.১৯ শতাংশ।
চ) স্বাস্থ্য ও সামাজিক সেবা খাত: ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে জিডিপিতে এই খাতের অবদান ছিল ১.৮৮ শতাংশ এবং প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৪.৭৬ শতাংশ। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে এই খাতের অবদান ছিল ১.৮৯ শতাংশ এবং প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭.৬৬ শতাংশ। (উৎস: বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা- ২০২০ )
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে জিডিপির গুরুত্ব
এককভাবে ধরলে আমাদের মোট জাতীয় উৎপাদনে কৃষির অবদানই সর্বাধিক। তবে শিল্পের ভূমিকাও দিন দিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এছাড়া সেবা খাতসমূহও দেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখছে। বর্তমান বিশ্ব প্রযুক্তি-নির্ভর। কৃষি, শিল্প, যোগাযোগ, সেবা প্রভৃতি খাতের উন্নয়নে প্রযুক্তির বিকাশকে কাজে লাগিয়ে আমরা সহজেই আমাদের জাতীয় উন্নয়নকে ত্বরান্বিত ও জাতীয় আয় বৃদ্ধি করতে পারি। সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে বিভিন্ন খাতের উন্নয়নের মধ্যে সমন্বয় ও আয়ের ভারসাম্য রাখা গেলে জনগণের জীবনমানের উন্নয়নেও তা সহায়ক হবে।
কাজ : বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধিতে যেসব খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে সেগুলোর একটি তালিকা তৈরি কর এবং খাতওয়ারি অবদানের বিবরণ দাও ।